Forever

Forever
Wellness Products

Organic Food

সুস্বাস্থ্যের প্রধান শর্তই হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস। বর্তমানে গ্রামের হাট থেকে শহরের মল সবখানেই ক্ষতিকর রাসায়নিক, ফল, সবজি সবকিছুতেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। যা শরীরের পক্ষে কোনো ভাবেই নিরাপদ নয়। এরফলে নিজেদের অজ্ঞাতসারেই শরীরে বাসা বাঁধছে মরণ রোগ ব্যাধি।

স্বাস্থ্য সচেতন সকলের জন্য খাদ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। 

অর্গানিক ফুড কি? অর্গানিক ফুড চিনবেন কিভাবে?

একটি সুস্থ্য ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য অর্গানিক ফুড কি এ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা থাকা দরকার। বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিদিনই আমাদের নানা খাবার খেতে হয়। কিন্তু আমাদের গ্রহণ করা এসব খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর, এটা কি কখনো গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছেন?

যুক্তরাষ্ট্রে Centers for Disease Control and Prevention এর একটি জরিপ অনুযায়ী শুধু আমেরিকাতেই প্রতি ৬ জনের ১ জন মানুষ খাদ্য থেকে হওয়া রোগে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, সুস্থ‌্য জীবনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের বার্তার আজকের এই আর্টিকেলে আজ আমরা আলোচনা করবো য অর্গানিক ফুড কি এবং এর উপকারিতাসহ অন্যান্য সকল গুণাগুণ নিয়ে।

অর্গানিক ফুড বলতে আসলে কি বোঝায়?

অর্গানিক ফুড হলো সেই খাদ্য যা কোনোরকম রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়। এটির রক্ষণাবেক্ষণে কোন কৃত্রিমতা থাকে না। পাশাপাশি পরিবেশ-বান্ধব এই চাষে ফসল পরিবর্তন, জৈব পেস্ট ইত্যাদির উপর নজর দেওয়া হয়। কৃষি-বাস্তুসংস্থান গত নীতি অনুসারে এই উৎপাদন আমাদের জীববৈচিত্র ও সুন্দর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করে।

অর্গানিক ফুড কি?

অর্গানিক ফুড (Organic Food) বা জৈব খাদ্য হলো এমন খাদ্য যা কোনো প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়। এ ধরনের খাবার উৎপাদন থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত কোন কৃত্রিমতা থাকে না। পাশাপাশি এগুলো চাষাবাদে জৈব সার এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক কৃষি উপকরণ ব্যবহৃত হওয়ায় অর্গানিক ফুড উৎপাদন পরিবেশ বান্ধব হয়ে থাকে।

অর্গানিক ফুড মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর। এগুলো উৎপাদনে রাসায়নিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় না বলে এগুলো খেলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি এ ধরনের খাবার উৎপাদন আমাদের জীববৈচিত্র ও সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করে। বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অর্গানিক ফুড গ্রহণে বিশেষ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কেন খাবেন অর্গানিক ফুড?

১. ভেজাল খাবার একেবারে এড়িয়ে যেতে

  • দীর্ঘায়ু লাভে অর্গানিক ফুডের বিকল্প বোধয় খুঁজে পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তবে প্রক্রিয়াকরণ জাত বা প্যাকেটজাত খাদ্যে কি পরিমানে ভেজাল মেশানো হচ্ছে জানলে হতবাক হতে হয়।
  • ফলমূল পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইথিলীন বা কার্বাইড। মাছ, মাংস, দুধ, শাকসবজি, ফলমূল এগুলো বেশি সময় অব্দি টাটকা রাখার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে ফরমালিন।
  • মুড়িতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক ইউরিয়া। ভেজাল খাবার যা বুঝতে পারবেন না এমনিতে।
  • আটা ময়দা বা চিনিতে অবাধে চলছে বিষাক্ত চক পাউডার এর ব্যবহার।চালে মেশানো হয় প্লাস্টিক।
  • ক্যাফেইন এবং সিলদেনাফিল্ড সাইট্রেটসফট ড্রিংকসে ব্যবহার করা হচ্ছে।
  • সরষে থেকে সয়াবিন তেল সবেতেই গন্ধ ও রং বজায় রাখতে সায়ানাইড এর সাথে পাম তেল,পশুর চর্বি বা স্টার্চ মেশানো চলছে।

২. নানা রকমের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে

  • পশু ও মাছের খাদ্যে উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার এর ফলে মানুষের শরীরে তা দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। যার ফল হচ্ছে ভয়াবহ।
  • হৃদযন্ত্র, কিডনির কার্যকলাপ, স্নায়ু চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাসায়নিক এর দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব এর দরুন।
  • পেটব্যথা, শুকনো কাশি, ডায়রিয়া, আলসার ও ফুসফুস এর বহুবিধ রোগ সৃষ্টি হচ্ছে ফরমালিন, কার্বাইড বা আজিনামোটোর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করার ফলে।
  • নানা প্রকার চর্মরোগ এমনকি শ্বাসনালী, কিডনি, পাকস্থলীতে ডেকে আনছে প্রাণঘাতী ক্যানসার হচ্ছে হাইড্রোজেন পারক্সিডের দ্বারা।
  • প্লেটলেট এর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে অচিরেই ফলে ছড়াচ্ছে অ্যানিমিয়া। শিশু বয়স্ক থেকে শুরু করে গর্ভবতী মহিলা ঝুঁকি থাকছে সবারই। পেটে থাকা সন্তান জন্ম নিতে পারে প্রতিবন্ধকতা ও অটিজম এর মত মারাত্মক রোগ নিয়ে।
  • শরীরের কোষে অক্সিজেন সঞ্চালন এ বাধা দেয় ফলে স্ট্রোক, মাথাঘোরা বা ব্লাড প্রেসার এর সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় অ্যাসিটিক এসিড ও ফরমালডিহাইড।
  • স্মৃতিভ্রংশ বা দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধি আসাও অসম্ভব কিছু নয়।

কিভাবে বুঝবেন কোন খাবার অর্গানিক?

  • সম্প্রতি সিকিম রাজ্যটিকে ইউনাইটেড নেসন ১০০% অর্গানিক স্টেট হিসেবে ঘোষণা করায় অর্গানিক ফুড নিয়ে হইচই পড়ে গেছে।
  • কিন্তু কিভাবে বুঝবেন কোন খাবার অর্গানিক? ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর অর্গানিক প্রোডাকশন নামের একটি সংস্থা রয়েছে যাদের অধীনে রয়েছে বহু সার্টিফাইং এজেন্সি এমনকি ফুড সেফটি এবং স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। ফার্ম গুলোকে এদের কাছ থেকেই সার্টিফিকেট আদায় করতে হয়।
  • গ্রীন পার্ক অর্গানাইজেশন এর এক কর্তার কথায় ক্রেতাদের অবশ্যই কেনার সময় ১০০% অর্গানিক লেবেল দেখেই কেনা উচিত।
  • সার বা পেস্টিসাইড ছাড়া এইসব খাবার উৎপন্ন হচ্ছে তাই এগুলোর দাম অবশ্যই বেশি হবে এবং এগুলিতে ব্যবহৃত হয় রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং।

অর্গানিক ফুডের উপকারিতা

অর্গানিক ফুডের উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় এটি খাওয়ায় কোন আশঙ্কা থাকে না। বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভেজাল থাকে, যা গ্রহণে মানুষ ধীরে ধীরে বড় ধরনের রোগ ব্যাধির দিকে পতিত হয়।
হৃদযন্ত্র, কিডনির কার্যক্রম ও স্নায়ু চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
বিভিন্ন প্রাণীজ খাদ্য যেমন মাছ ও মাংশে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে তা দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। 

ভবিষ্যতে আগত সন্তান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা বা মারাত্মক সব রোগ নিয়ে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের ফলে শিশু-বয়স্ক থেকে শুরু করে গর্ভবতী মায়েদেরও প্রবল ঝুঁকি থাকছে।

অর্গানিক চাষের প্রবণতা পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে পারে, পানি সংরক্ষণ করতে পারে, মাটির ক্ষয় হ্রাস করতে পারে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারে। অর্গানিক ফুড শুধু মানব স্বাস্থ্যের জন্যই না, এটি আমাদের পরিবেশের জন্যও ইতিবাচক। 

অর্গানিক ফুডের গুণাগুণ

অর্গানিক ফুড অ্যান্ড ফার্মিং, মিথ অ্যান্ড বাস্তবতা‘ টপিকের ওপর বিশ্বের প্রায় ৩৬ টি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে দেখেছে এ ধরনের অর্গানিক খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের পক্ষে খুব উপকারী।

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ অর্গানিক ফুড ব্যবহারই সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার একমাত্র উপায়।হাউস অফ লর্ডস মার্কিন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান বিষয়ক কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাণীজ খাবারে যে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তাতে মানুষের শরীরে নানা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রোগ বাসা বাঁধছে। 

তাই অর্গানিক ফুড ব্যবহার করুন যা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং পরিবেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের কান্ডারী।

খাবার অর্গানিক কিনা কিভাবে বুঝবেন?

  • খাবারের চেহারা: অর্গানিক ফুড এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত খাবার কখনোই দেখতে এক রকমের হবে না। অর্গানিক ফুডে রঙ খুব বেশি গাঢ় হয় না। এটা দেখতে একেবারেই প্রাকৃতিক এবং সতেজ। অনেক সময় এ ধরনের খাবার হাতে নিলেই এর পরিচিতি সম্পর্কে জানা যায়।
  • আকৃতি: হাইব্রিড ফসলগুলো সাধারণত বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। তবে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফলমূল, শাকসবজি এবং অন্যান্য শস্য আকারে বিশাল হবে না। এর স্বাভাবিক হয়ে থাকে এবং ভেতরে পোকার উপদ্রপ থাকে না বললেই চলে।
  • খাবারের স্বাদ: অর্গানিক ফুডের স্বাদ যে অতুলনীয় হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন আপনি অর্গানিক শাকসবজি রান্না করবেন, আপনি মশলার প্রয়োজনীয়তা কম অনুভব করবেন। কারণ প্রাকৃতিকভাবেই এ ধরনের খাবারের স্বাদ বেশি হয়ে থাকে।
  • দ্রুত রান্না হয়: কীটনাশকযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করার প্রয়োজন পরে। অপরদিকে অর্গানিক ফুড রান্না করতে তুলনামূলক কম সময় লাগে।
  • গন্ধ: যেহেতু অর্গানিক ফুড মসলা ও তেল বর্জিত প্রাকৃতিক খাবার, এর গন্ধ সম্পূর্ণই আলাদা ও শক্তিশালী হয়ে থাকে। অপরদিকে অজৈব খাবারে মশলায় তেল ও মসলার প্রচণ্ড ব্যবহারের ফলে একটা পর্যায়ে এর থেকে গন্ধ বের হতে থাকে।
  • স্বাস্থ্যকর: অর্গানিক খাবার স্বাস্থ্যকর হওয়ায় আপনার হজম প্রক্রিয়াকে আরো সহজ ও দ্রুত করে তোলে। এর ফলে আপনি অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস সম্পর্কিত সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পান।

 আরো দেখুন: গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরমুক্তির উপায়


শেষ কথা

অর্গানিক ফুড চাষাবাদে রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে কৃষক, তাদের পরিবার এবং ভোক্তার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হ্রাস করে। যার ফলে যে মাটিতে কৃষক কাজ করে, ফসল উৎপাদন করে, এবং যে বায়ুতে তারা শ্বাস নেয়, যে পানি তারা পান করে, অর্গানিক ফুড উৎপাদনের ফলে সবই নিরাপদ থাকে।

রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত খাদ্য গ্রহণের হলে বিশেষত শিশুরা কীটনাশকের ঝুঁকিতে থাকে। তাই এখন থেকে বাজারে জৈব এবং আঁশযুক্ত খাদ্য খাবারগুলো কিনুন। এতে আপনার এবং পরিবারের স্বাস্থ্যই ভালো থাকবে না, পরিবেশও ব্যপক ঝুঁকি থেকে বাঁচবে।
      



Post a Comment

0 Comments